মোঃ ফারুক, পেকুয়া :: ৭৫ বছর বয়স! এই সময়টায় অন্য দশ জন বয়োবৃদ্ধের মতো বিছানায় পিঠ লাগিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার কথা তার! পোলাও-কোরমা না হোক, একমুঠো লবণ কিংবা একটু আধটু মরিচের ঝাল দিয়ে নিশ্চিন্তে দু’মুঠো পান্তা খাওয়ার কথা ছিল তারও। কিন্তু কপালে জুটেনি সেই বিশ্রাম। বরং ১হাজার টাকার বেতনের চাকরি করে চলছে তাদের সংসার। কখনো খেয়েছন আবার কখনো না খেয়ে থাকলেও বাড়ি সংস্কার করার সাহস কখনো হয়নি। যার কারণে ভেঙে যাওয়া এক কুঠিরে দিনাপাত করছেন তারা।
বলছিলাম পেকুয়া উপজেলার সদর ইউপির বাইম্যাখালী এলাকার বয়োবৃদ্ধ আমান আলীর কথা।
স্ত্রী তাহেরা বেগম ছাড়াও তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার। তার মধ্যে এক ছেলে মারা গেছেন বহু আগে। অপর দুই ছেলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পিতা মাতার কাছ থেকে পৃথক হয়ে গেছেন। মেয়ের বিবাহ দিলেও স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে পিতা মাতার সাথে রয়েছেন।
বৃদ্ধ এ মানুষটি খূব অসহায় অবস্থায় দিনাপাত করছেন। বৃদ্ধ এ লোকটি কাজ করার মত সক্ষমতা না থাকলেও পেটের দায়ে একটি ভাঙ্গারীর দোকানে মাসিক এক হাজার টাকায় চাকরি করেন। ছেলেরাও তাদের সংসার নিয়ে দুঃখ কষ্টে সংসার কারণে পিতা মাতার ভরণ পোষণ চালাতে অক্ষম। এছাড়াও স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কোনমতে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন তিনি।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এত বছরেও কষ্টে দিনাপাত করলেও জনপ্রতিনিধি তাদেরকে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার মত কার্ড করে দেয়নি। ঘরের উপরে পলিথিনের চাউনি আর কোনমতে জোড়া লাগানো কিছু বেড়া রয়েছে। রোদের সময় প্রচুর রোদ আর বৃষ্টির সময় বৃষ্টি পড়ায় বাড়ির ভিতর থাকতে হয় অসহ্য যন্ত্রনায়। এমনকি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অসহায় মানুষদের জন্য অহরহ ঘর উপহার দিলেও সংশ্লিষ্টদের খুশি করতে না পারায় ভাগ্যে জুটেনি বরাদ্দকৃত ঘর।
সরেজমিন দেখা গেছে, আমান আলী তার স্ত্রীসহ মেয়েকে নিয়ে একটি ভেঙে যাওয়া ঘরে বসবাস করছেন। টয়লেট না থাকায় খোলা আকাশের নিছে সারতে হয় প্রয়োজনীয় কাজ। টিউবেল না থাকায় পানি আনতে হয় অনেক দূরের একটি বাড়িতে গিয়ে। সবচেয়ে করুণ অবস্থায় পাওয়া গেছে তাদের থাকার ঘরটি। চারপাশে বেড়া থাকলেও বেড়া ভেঙে যাওয়ায় বাড়ির ভিতর সব কিছু দেখা যায়। তারপরও উপায় না থাকায় কষ্ট নিয়ে থাকেন বাড়িতে।
বৃদ্ধ আমান আলী বলেন, এক ছেলে গাড়ি দূর্ঘটনায় মারা গেছে। অপর দুই ছেলে তাদের সংসার নিয়ে পৃথক হয়ে গেছে। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে চলে আসা মেয়েটিকে সাথে নিয়ে আমরা স্বামী স্ত্রী বসবাস করি। আমি অসুস্থ তারপরও একটি ভাঙ্গারীর দোকানে কাজ করে মাসে অল্প কিছু টাকা পায়। তা দিয়ে কোন মতে চলি। এছাড়াও স্ত্রীও বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এমনও সময় গেছে না খেয়ে থেকেছি আমরা। প্রতিবেশীদের সহযোগিতা না থাকলে কবে না খেয়ে মারা পড়তাম। জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহুবার গেছি কিন্তু কোন সহযোগিতা পায়নি।
তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ওনি খুব ভাল মনে অধিকারী। চাইলে একটা ঘর ওনি সরকারি বরাদ্দ থেকে ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। এছাড়াও তিনি প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য দয়াবান মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ জাফর আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বয়োবৃদ্ধ বলেন, শুনেছি মাননীয় এমপি মহোদয় অনেক সহযোগিতা করেন অসহায় মানুষদের। আশা করি আমাকে একটা বাড়ি করে দিবেন।
তার স্ত্রী তাহেরা বেগম বলেন, আমরা স্বামী স্ত্রী খুব কষ্টে দিনযাপন করছি। আশা করি দয়াবান মানুষ আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন।
অসহায় আমান আলীর জন্য আর্থিক ও একটি ঘর প্রয়োজনে সহযোগিতা করতে চাইলে তার মেয়ে -01890085488 (বিকাশ পার্সোনাল)।
পাঠকের মতামত: